আমাদের সম্পর্কে | যোগাযোগ

২১ নভেম্বর

২০২৪ বৃহস্পতিবার

নিউজ বুলেটিন: ঢাকার রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি ও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২২

আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২২

২৮২

শেয়ার:

অসময়ে পদ্মার ভাঙন, দিশেহারা গোয়ালন্দের মানুষ

News

অসময়ের তীব্র নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম এলাকার পদ্মাপারের মানুষ। গত বর্ষার ভয়াবহ নদীভাঙনের ক্ষত মিটতে না মিটতেই আবার শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমের এই ভাঙনে গত এক সপ্তাহে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে এখন পদ্মাপারের হাজারো মানুষের। 


জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তথ্যমতে, প্রমত্তা পদ্মার ভয়াল গ্রাসে গত ২০১৭ সালে ১৯১৫টি, ২০১৮ সালে ২০৭০টি এবং সবশেষ ২০১৯ সালে জেলায় ৩১২০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। হিসাবমতে সব মিলিয়ে এই তিন বছরে পদ্মা গিলে নিয়েছে ৭ হাজার ১০৫টি বসতবাড়ি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদীতীরের একের পর এক মাটির চাক ভেঙে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে পদ্মায়। নদীতীরের নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা ধানসহ অন্যান্য ফসল। জমির মালিকরা জমিতে রোপণ করেছেন কালো বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, চাল কুমড়াসহ নানান জাতের সবজির চারা। নদীর পাড় ঘেঁষে আবার কিছু জমি চাষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। যখন দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস আসে তখন পানির ধাক্কায় নদীর পাড় বেশি ভাঙতে থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে চর অঞ্চলের নিচু ফসলি জমি ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে ফসল।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াজানি গ্রামের কৃষক জালাল বিশ্বাস বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পদ্মার পেটে আমার প্রায় ১০ বিঘা ফসলি জমি চলে গেল। জমিতে ধান ছিল, ধুনচা ছিল। আবার গবাদি পশুর জন্য ঘাসও লাগানো ছিল। কিছু জমি চাষ করা হয়েছে আবার কিছু জমিতে কালো বেগুন ও টমেটোর চারা রোপণ করা হয়েছিল। সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে।’ 

হাহাকার তুলে নিঃস্ব এই কৃষক বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাব? কী করব? কার কাছে বললে ভাঙন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলি জমি ভাঙছে বসতবাড়িও আর রক্ষা পাবে না। এভাবে আর দুয়েক সপ্তাহ নদী ভাঙলেই কাওয়াজানি গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।’

আরেক কৃষক লোকমান সরদারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ও চাচাদের অনেক জমি ছিল। ভাঙতে ভাঙতে প্রায় সব জমিই নদীতে চলে গেছে। কিছু জমি নদীর পাড় দিয়ে আছে, সেই জমিগুলো কোনোরকম আবাদ করে সংসার চালাই। আজ এক সপ্তাহ ধরে নতুন করে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তাতে আমার দুই বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেল। এভাবে যদি নদী ভাঙতে থাকলে তাহলে আমার সবটুকু জমি নদীতে চলে যাবে। তখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কী করে খাব।’ 

দৌলতদিয়ার বাসিন্দা খলিল মল্লিক বলেন, ‘শুধু ফসলি জমি নয়। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে পুরো গ্রামসহ ফেরি ও লঞ্চঘাট। ঝুঁকিতে আছে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রামের পাঁচটি বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ হাজার হাজার বসতবাড়ি।’ অসময়ে এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখেননি বলেও জানান তিনি।

পদ্মাপারের অপর এক বাসিন্দা নুরী বিবি বলেন, ‘ভোটের সময় চেয়ারম্যান-মেম্বার-এমপিরা আসেন; বলেন ভোট দেন, নদী বেঁধে দেব। কিন্তু ভোটের পরে আর কারো দেখা পাওয়া যায় না।’ 

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নদী শাসনের জন্য বরাবরই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি। এবার নদী শাসনের জন্য দৌলতদিয়া ফেরিঘাট আধুনিকীকরণ কাজ হবে।’

এ ব্যাপারে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘হঠাৎ ভাঙনের কথা শুনেছি। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকায় সরকারিভাবে বিআইডব্লিটিএ কাজ করবে।’

বিস্তারিত দেখুন অসময়ে পদ্মার ভাঙন, দিশেহারা গোয়ালন্দের মানুষ


পদ্মার ভাঙন তীব্র ভাঙন পদ্মা নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে কালো বেগুন টমেটো মরিচ লাউ চাল কুমড়াসহ নানান জাতের সবজির চারা

মন্তব্য করুন-