সরকার কৃষি খাতের জন্য ভর্তুকি ও অন্যান্য সেবা প্রদান করে। তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা সঠিকভাবে পান না। সেচের জন্য সরকার বিদ্যুৎ বিলে যে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয় সেখানেও কৃষকরা অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। ফলে মাঠ পর্যায়ের কৃষক সঠিকভাবে ভর্তুকি পাচ্ছেন কি না সেদিকে সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেটে কৃষকের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান।
অনুষ্ঠানে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং বারসিক’র পরিচালক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, বারসিক’র পরিচালক এ বি এম তৌহিদুল আলম, সৈয়দ আলী বিশ্বাস, মানিকগঞ্জের জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি করম আলী মাস্টার, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগম, মানিকগঞ্জের বায়রার কিষান-কিষানি সংগঠনের সভাপতি রাবেয়া বেগম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই মহামারিতে কৃষকের অবদানকে স্মরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মতো কৃষকরাও আমাদের সেবা প্রদান করছেন। তাঁরা যদি তাঁদের কার্যক্রম ঠিকমতো না করতেন তাহলে পুরো দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। কৃষিযন্ত্র ক্রয় ও কৃষি উন্নয়নে সরকার ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে এই ভর্তুকির বড় অংশ তাঁরা পাচ্ছেন কি না সেদিকে মনিটরিং বাড়াতে হবে। কারণ বর্তমানে তাঁরা (কৃষক) নানা রকমের অনিয়ম ও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।’ তিনি দাবি করেন সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক কৃষককে বিঘাপ্রতি খরচ বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায় দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না। সেচের কাজে যাঁরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন তাঁরা কৃষকের কাছ থেকে বেশি অর্থ নিচ্ছেন। ফলে কৃষক তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সরকার প্রতিবছরই কৃষকের সার ও বীজ কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে ভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের প্রয়োজন। অঞ্চলভেদে কৃষিঋণ, সেচ ও অন্যান্য সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। বর্গা চাষিরা যেন বিনা জামানতে ঋণ পান সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কৃষির জন্য উন্নত মানের সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে। কিন্তু কৃষক ঠিকমতো ন্যায্য মূল্য পান না। এবারে কৃষি বাজেটে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৩১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বাজেটের থেকে ৬.৫ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে বিবেচনা করলে এবারের বাজেটে কৃষি খাতে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে মোট শতাংশ হিসাব করলে প্রকৃতপক্ষে কৃষি বাজেট বাড়েনি। পূর্ববর্তী বাজেটের বিষয়টি বিবেচনা করলে এবারের কৃষিতে বাজেট আরো বেশি গুরুত্ব পেতে পারত। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রতিবছর যে ভর্তুকি দেওয়া হয় সেটি খরচ হয় না। তাই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে এই ভর্তুকি যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। কৃষি উপকরণের জন্য ভর্তুকির কিছু রেখে বাকিটা যদি কৃষকের হাতে নগদভাবে বিতরণ করা হয় তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবেন এবং ভালোমতো ব্যবহার করতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৃষি মূল্য কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে অনেকবার। এটি খুব দরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি গঠিত হলে কৃষকরা তাঁদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতেন। এ ছাড়া কৃষকের কাছ থেকে যে ফসল সংগ্রহ করা হয় সেটা যদি মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ হয় তাহলে কৃষকরা লাভবান হবেন।’ ৫০ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহ করা যায় এমন গুদাম তৈরির কথাও তিনি প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ‘৫০ লাখ টন ধারণক্ষমতার গুদাম তৈরি করা হলে কৃষকের কাছ থেকে ধান ছাড়াও গম ও অন্যান্য ফসল সংগ্রহ করা যাবে। এতে কৃষকরা তাঁদের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এ ছাড়া মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতেও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষি ও কৃষকের সার্বিক কল্যাণের কথা ভেবে মৎস্য ও পশুপালন খাতটিও ভর্তুকির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কৃষি ও কৃষকের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই করোনাকালে কৃষিঋণ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করতে হবে এবং এই ঋণের সুদ অবশ্যই ৪ শতাংশ হওয়া উচিত।’
বিস্তারিত দেখুন কৃষকের ভর্তুকি ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে চাই মনিটরিং
ছবি: কালের কন্ঠ